***রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনা "ছবি ও গান" আমাদের নিয়ে যায় সেই সময়ে, যখন শৈশব ও যৌবনের সন্ধিক্ষণে একজন তরুণ লেখক নিজের পরিচয় খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করছে। বয়ঃসন্ধির সেই সংকটময় মুহূর্তে, যেখানে ছেলেমানুষি ভাষা ও কৈশোরের ভাব মিলে মিশে যায়, সেখানে লেখকের মনস্তাত্ত্বিক অস্থিরতা ও সৃজনশীলতার সন্ধান মেলে। এই রচনা কেবল সুরের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে রূপের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ার কাহিনী বলে। এই কাহিনী আমাদের সামনে তুলে ধরে লেখকের প্রথম দৃষ্টিভঙ্গি ও সৃষ্টিশীলতার হাতেখড়ি, যা পরবর্তীকালে তার সাহিত্যিক জীবনের ভিত্তি স্থাপন করে। "ছবি ও গান" সেই সৃষ্টিশীল যাত্রার প্রাথমিক পদক্ষেপ, যেখানে তার ভাষা ও ভাবনা প্রথম মূর্ত হয়ে ওঠে।
ছবি ও গান
ছবি ও গান নিয়ে আমার বলবার কথাটা বলে নিই। এটা বয়ঃসন্ধিকালের লেখা, শৈশব যৌবন যখন সবে মিলছে। ভাষায় আছে ছেলেমানুষি, ভাবে এসেছে কৈশোর। তার পূর্বেকার অবস্থায় একটা বেদনা ছিল অনুদ্দিষ্ট। সে যেন প্রলাপ বকে আপনাকে শাস্ত করতে চেয়েছে। এখন সেই বয়স যখন কামনা কেবল সুর খুঁজছে না, রূপ খুঁজতে বেরিয়েছে। কিন্তু আলো-আধারে রূপের আভাস পায়, স্পষ্ট করে কিছু পায় না। ছবি এঁকে তখন প্রত্যক্ষতার স্বাদ পাবার ইচ্ছা জেগেছে মনে কিন্তু ছবি আঁকার হাত তৈরি হয়নি তো।
কবি সংসারের ভিতরে তখনো প্রবেশ করে নি, তখনো সে বাতায়নবাসী। দূর থেকে যার আভাস দেখে তার সঙ্গে নিজের মনের নেশা মিলিয়ে দেয়। এর কোনো-কোনোটা চোখে দেখা এক টুকরো ছবি পেনসিলে আঁকা, রবারে ঘষে দেওয়া, আর কোনো-কোনোটা সম্পূর্ণ বানানো। মোটের উপরে অক্ষম ভাষার ব্যাকুলতায় সবগুলিতেই বানানো ভাব প্রকাশ পেয়েছে, সহজ হয়নি। কিন্তু সহজ হবার একটা চেষ্টা দেখা যায়। সেইজন্যে চলতি ভাষা আপন এলোমেলো পদক্ষেপে এর যেখানে সেখানে প্রবেশ করেছে। আমার ভাষায় ও ছন্দে এই একটা মেলামেশা আরম্ভ হল। ছবি ও গান কড়ি ও কোমলের ভূমিকা করে দিলে।
***এই গল্পের শেষে এসে আমরা দেখতে পাই, কিভাবে একজন তরুণ কবি তার সৃষ্টির প্রাথমিক পর্যায়ে নিজেকে প্রকাশ করতে চেয়েছে। তার ভাষায় ও ছন্দে সহজ ও অশুদ্ধতার মেলামেশা ঘটেছে, যা তার পরবর্তী সৃষ্টির ভিত্তি স্থাপন করেছে। "ছবি ও গান" এই যাত্রার এক সুন্দর প্রতিফলন, যা কড়ি ও কোমলের ভূমিকা পালন করে লেখকের ভবিষ্যৎ সাহিত্যকর্মের পথে আলোকপাত করেছে। এই যাত্রা শুধুমাত্র সুর ও রূপের সন্ধান নয়, বরং নিজের সৃষ্টিশীলতার একটি নিরবচ্ছিন্ন খোঁজ।
Comments
Post a Comment